দেবতাখুম – বান্দরবানের বুনো সৌন্দর্যে এক অভাবনীয় অভিযান
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের গভীর অরণ্যে লুকিয়ে আছে এক রোমাঞ্চকর গন্তব্য—দেবতাখুম। পাহাড় আর পানির সম্মিলনে সৃষ্টি এই প্রাকৃতিক খুমকে অনেকেই বলেন “খুমের রাজা”। এটি শুধু সৌন্দর্য নয়, বরং অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে চাওয়া ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এক আদর্শ জায়গা।
দেবতাখুমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
দেবতাখুম একটি প্রাকৃতিক জলাধার (খুম), যার গভীরতা আনুমানিক ৫০–৭০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ ফুট। এটি ভেলাখুম থেকে অনেক বড় এবং পরিবেশ তুলনামূলকভাবে বন্য ও রহস্যময়। স্থানীয়রা একে সোনাখুম বা মারমা ভাষায় থংচিখুম নামেও চিনে।
দেবতাখুম ভ্রমণের রুট এবং যাত্রাপথ
দেবতাখুম পৌঁছানোর জন্য আপনাকে যেতে হবে ধাপে ধাপে:
- ঢাকা → বান্দরবান:
– নন-এসি বাস ভাড়া: প্রায় ৬২০ টাকা
– সময়: ৮–১০ ঘণ্টা (রাতের বাসে যাওয়া সুবিধাজনক) - বান্দরবান → রোয়াংছড়ি বাজার:
– বাস: ৬০ টাকা (সময় ১ ঘণ্টা)
– অথবা সিএনজি রিজার্ভ: ৫০০ টাকা (যাত্রীভেদে ভাগ করে নেওয়া যায়) - রোয়াংছড়ি → কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্প:
– সিএনজি ভাড়া: ১৫০–২০০ টাকা
– সময়: ৩০–৪০ মিনিট - কচ্ছপতলী → শীলবাঁধা পাড়া (লিরাগাঁও):
– ট্রেকিং সময়: প্রায় ৪০ মিনিট
– এখান থেকেই শুরু হবে প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চার - শীলবাঁধা পাড়া → দেবতাখুম:
– ১০ মিনিটের ট্রেকিং, এরপর বাঁশের তৈরি ভেলায় খুম এক্সপ্লোর
অ্যাডভেঞ্চার ও প্রকৃতির সম্মিলন
দেবতাখুম যাওয়ার ট্রেইল একদিকে যেমন চমৎকার, অন্যদিকে তেমনি রোমাঞ্চে ভরপুর। দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত জলরাশির মাঝে ভেলায় ভেসে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই অবিস্মরণীয়। চারপাশে নিঃস্তব্ধ পরিবেশ, মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে, শুধু শোনা যায়—জলের শব্দ, ভেলার আওয়াজ আর নিজের গলার প্রতিধ্বনি। সূর্যের আলোও যেন কৃপণ এখানে—সব মিলিয়ে যেন আপনি প্রকৃতির গভীরে ঢুকে পড়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ পরামর্শ
- কচ্ছপতলীতে রিপোর্ট করতে হবে আর্মি ক্যাম্পে; জাতীয় পরিচয়পত্রের ২ কপি ফটোকপি সঙ্গে রাখুন
- শেষ বাজার কচ্ছপতলী, এখান থেকেই পানি ও খাবার কিনে নিন
- রবি/এয়ারটেল ছাড়া অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্ক কাজ করবে না
- ট্রেকিং স্যান্ডেল বা জুতা থাকতেই হবে; না থাকলে বান্দরবান শহরে কিনুন (১২০–১৪০ টাকা)
- পথে শীলবান্ধা ঝর্ণা নামে একটি জলপ্রপাত রয়েছে—দেখে যেতে ভুলবেন না
- বর্ষাকালে খুমের সৌন্দর্য দ্বিগুণ হলেও, ট্রেইল অত্যন্ত পিচ্ছিল হয়—নতুনদের জন্য শুষ্ক মৌসুম শ্রেয়
রুট সংক্ষেপে:
বান্দরবান
→
রোয়াংছড়ি
বাজার
→
কচ্ছপতলী
→
শীলবাঁধা
পাড়া
→
দেবতাখুম
📌 শেষ কথা
দেবতাখুম ভ্রমণ শুধু আরেকটি ট্রেকিং নয়—এটা হলো প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার এক অপার সুযোগ। যদি আপনি ভিন্ন স্বাদের অ্যাডভেঞ্চার চান, যেখানে কোলাহল নেই, কৃত্রিমতা নেই—তাহলে দেবতাখুম হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।